উখিয়া নিউজ ডেস্ক
প্রকাশিত: ২৪/১২/২০২৩ ৭:৪২ এএম

ঢাকা-কক্সবাজার রুটে গত ১ ডিসেম্বর থেকে চালু হয়েছে ট্রেন। চালুর দিন থেকেই এক থেকে দেড় ঘণ্টা যাত্রাবিলম্ব; বসার আসন ও টয়লেট নিয়ে বিস্তর অভিযোগ যাত্রীদের। এ রুট চালু করার লক্ষ্যে ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে শুধু চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণে। ঢাকা-কক্সবাজার রুটে ব্যাপক যাত্রীচাহিদা সত্ত্বেও দিনে মাত্র একটি ট্রেন চলছে। জানা গেছে, আগামী ১ জানুয়ারি থেকে আরেকটি ট্রেন চলবে। ঈশ্বরদী-পাবনা-ঢালারচর ৭৯ কিলোমিটার দীর্ঘ রেলপথটি চালুর পর থেকে ঢালারচর এক্সপ্রেস নামের একটি মাত্র ট্রেন চলাচল করছে। এ রুটে যাত্রী চাহিদা নেই বললেই চলে। অথচ রেলপথটি নির্মাণে ১ হাজার ৭১৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। জানা গেছে, তৎকালীন পরিকল্পনামন্ত্রী একে খন্দকারের বিশেষ আগ্রহে নির্মিত ঈশ^রদী-ঢালারচরে ট্রেনের চাহিদা নেই, তা রেল কর্তৃপক্ষও জ্ঞাত। আবার কক্সবাজার রুটে চাহিদা সত্ত্বেও পর্যাপ্ত ট্রেন দিতে ব্যর্থ রেল কর্তৃপক্ষ।

একই অবস্থা অন্য আরও অনেক রুটের ক্ষেত্রেও। কোথাও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে রেলপথ তৈরি হয়েছে, যাত্রীচাহিদাও আছে। কিন্তু ট্রেন চলাচল করছে কম। আবার কোথাও বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয়ে রেলপথ তৈরি হয়েছে যাত্রীচাহিদার বিষয়টি বিবেচনা না করেই। এসব ক্ষেত্রে মন্ত্রণালয়ের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিদের অদক্ষতাও অনেকটা দায়ী বলে মনে করছেন কেউ কেউ। সংশ্লিষ্টদের মতে, বাস্তবতা বিবেচনায় না রেখে নতুন নতুন প্রকল্পের মাধ্যমে খরচের তালে আছে রেল। এর নেতিবাচক প্রভাবও পড়ছে। যাত্রী পরিবহনে ধারাবাহিকভাবে পিছিয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। ২০০৯ সালের পর থেকে প্রায় ১ লাখ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে এ খাতে। দেশে মোট যাত্রী চলাচলে রেলের ভাগ ৮ শতাংশ। অথচ স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে এ হার ছিল ৩০ শতাংশ।

একই সঙ্গে মোট পণ্য পরিবহনে রেলের অবদান ২৮ থেকে নেমে এসেছে ১৬ শতাংশে। ২০০৯-১০ অর্থবছরে বাংলাদেশ রেলওয়ের আয় ছিল ৫৬১ কোটি টাকা। যাত্রী ও মালপত্র পরিবহন করে এই আয় করেছে রেল। ২০২২-২৩ অর্থবছরে আয় হয়েছে ১৭৮৩ কোটি টাকা। আয় বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে রেলের পরিচালন ব্যয়ও বেড়েছে। সংগত কারণেই আয় বাড়লেও লোকসান কমেনি, উল্টো বেড়েছে। গত অর্থবছরে লোকসানের পরিমাণ ছিল প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা।

বর্তমান সরকার ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকেই রেলের গুরুত্ব বেড়ে যায়, বাড়ে বাজেটও। ওই বছরই রাজশাহী-ঢাকা-রাজশাহী রুটে চালু হয় ধূমকেতু এক্সপ্রেস। এরপর ২০১১ সালের ৪ ডিসেম্বর যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক করে রেলপথ মন্ত্রণালয় গঠন করে সরকার। ২০১১ সালেই চালু হয় রংপুর এক্সপ্রেস। এরপর ২০১২ সালে কালনী এক্সপ্রেস, ২০১৩ সালে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস, হাওর এক্সপ্রেস, কিশোরগঞ্জ এক্সপ্রেস, ২০১৪ সালে বিজয় এক্সপ্রেস, ২০১৬ সালে সোনার বাংলা এক্সপ্রেস ও মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস চালু হয়। পরের বছর বন্ধন এক্সপ্রেস চালু হয়। এরপর পর্যায়ক্রমে ঢালারচর এক্সপ্রেস, টুঙ্গিপাড়া এক্সপ্রেস, বনলতা এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস, বেনাপোল এক্সপ্রেস, কুড়িগ্রাম এক্সপ্রেস, জামালপুর এক্সপ্রেস, বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস, মিতালী এক্সপ্রেস, দোলনচাঁপা এক্সপ্রেস, চিলাহাটি এক্সপ্রেস ও কক্সবাজার এক্সপ্রেস চালু হয়েছে। এছাড়া কিছু মেইল ও লোকাল ট্রেন চালুর দাবি করেছে রেল কর্তৃপক্ষ। এই হলো দৃশ্যমান অগ্রগতি।

এ বিষয়ে রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, নাশকতার কারণে ট্রেন চলছে ধীরে। তাই একে আপনারা বলছেন যাত্রাবিলম্ব। বাস্তবতা হচ্ছে- একটি ইঞ্জিন আরেকটি ট্রেনকে ‘রেকি’ করে সামনের পথ এগিয়ে নেয়। এ কারণে ট্রেনের আসা-যাওয়ায় বিলম্ব হচ্ছে।

সেবার মান প্রসঙ্গে এক প্রশ্নে রেলমন্ত্রী বলেন, অভিযোগ এলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হয়। হয়তো দেখানো হয় না। আস্তে আস্তে রেলের অবস্থার পরিবর্তন হবে। সুফল দেখতে আরও সময় লাগবে। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার আগে রেলে ছিল অনুন্নয়নের ছাপ।

সূত্রমতে, গত এক দশকে রেলে বিস্তর বিনিয়োগ হলেও এখনো পুরনো ইঞ্জিন-কোচ, নড়বড়ে রেলপথ, ঝুঁকিপূর্ণ সেতু, লোকবল সংকট, যাত্রীসেবায় অব্যবস্থাপনা-অনিয়ম-দুর্নীতিসহ নানা সমস্যায় জর্জরিত রেলওয়ে। বিপুল অর্থ খরচ করে তৈরি করা রেলপথে ট্রেনের সংখ্যা তুলনামূলক কম। যেমন প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ের পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ঢাকা-ভাঙ্গা অংশে বাণিজ্যিক ট্রেন চলাচল শুরু হয় ১ নভেম্বর। শুরুর দিকে এ রুটে চলছে দুটি ট্রেন সুন্দরবন ও বেনাপোল এক্সপ্রেস। ঢাকা-খুলনা ও ঢাকা-যশোরের মধ্যে চলাচল করা এ ট্রেন দুটিকে বঙ্গবন্ধু সেতু রুট থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে পদ্মা সেতু রুটে। ১৮ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে হচ্ছে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত রেলপথ নির্মাণ। আর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু নির্মাণে খরচ হচ্ছে ১৭ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা। এ ছাড়া খুলনা- মোংলা রেলপথ নির্মাণে ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ২৬০ কোটি টাকা। গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি থেকে টুঙ্গিপাড়া পর্যন্ত ৫৫ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন একটি ব্রড গেজ রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পের মাধ্যমে কালুখালী-ভাটিয়াপাড়া অংশে আরো ৮২ কিলোমিটার রেলপথ পুনর্বাসন করা হয়। ২ হাজার ১১০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এ রেলপথটিতে বর্তমানে ট্রেন চলছে দিনে একটি। ঢাকা-চট্টগ্রামে রেলপথে তিন ধাপে খরচ হয়েছে ১০ হাজার ৪৮৭ কোটি টাকা। এতে এখন পর্যন্ত নতুন করে শুধু একটি পণ্যবাহী কনটেইনার ট্রেন চালু করতে পেরেছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। চালু হয়নি নতুন কোনো যাত্রীবাহী ট্রেন

পাঠকের মতামত

রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণের পক্ষে নয় বাংলাদেশ: পররাষ্ট্র সচিব

রোহিঙ্গাদের আত্তীকরণ বাংলাদেশের জন্য বিবেচনাযোগ্য বিকল্প নয় বলে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার (আইওএম) ঢাকা প্রধান ল্যান্স ...

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে ঢুকতে বিধিনিষেধ

ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাসপাতালে প্রবেশে বিধিনিষেধসহ ১০টি নির্দেশনা জারি করেছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। সরকারি ও বেসরকারি ...

আমাদের নিয়ত সহিহ, গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার হলেই নির্বাচন: সিইসি

অবাধ, সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন করতে নির্বাচন কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ বলে মন্তব্য করেছেন নতুন নির্বাচন কমিশনার ...